আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশ বা বিবর্তন একটি আলোচনা

by Scholario Team 51 views

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (IR) একটি বহুমাত্রিক ক্ষেত্র যা জাতিরাষ্ট্র, আন্তঃসরকারি সংস্থা (IGO), বহুজাতিক কর্পোরেশন (MNC), এবং অ-রাষ্ট্রীয় অভিনেতা সহ বিভিন্ন অভিনেতার মধ্যে মিথস্ক্রিয়া বিশ্লেষণ করে। এই জটিল ক্ষেত্রটি কূটনীতি, যুদ্ধ, বাণিজ্য, এবং বৈশ্বিক রাজনীতির অন্যান্য দিকগুলি নিয়ে কাজ করে। সময়ের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ধারণা এবং এর চর্চা ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়েছে। এই বিবর্তনকে বিভিন্ন তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ঐতিহাসিক ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যয়ন গত শতাব্দীতে যথেষ্ট প্রসারিত হয়েছে, যা বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করেছে। এই পর্যায়গুলো প্রধান ঘটনা, প্রভাবশালী চিন্তাবিদ এবং তাত্ত্বিক বিতর্কের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই বিকাশ বা বিবর্তন আলোচনা করা হলো:

প্রথম পর্যায়: প্রাক-প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সময়কাল

উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মূলত ইতিহাস এবং আইনের উপর কেন্দ্রভূত ছিল। এই সময়ে রাষ্ট্রগুলো কিভাবে একে অপরের সাথে взаимодейিত করত, তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং আইনি দিকগুলো প্রাধান্য পেত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে, কূটনীতি এবং ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার কৌশল নিয়ে আলোচনা হতো। এই সময়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  • ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ: এই সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণে ঐতিহাসিক ঘটনার উপর জোর দেওয়া হতো। যেমন, বিভিন্ন সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন, যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল ইত্যাদি।
  • আইনের প্রভাব: আন্তর্জাতিক আইনের নিয়মকানুন এবং চুক্তিগুলো কিভাবে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ককে প্রভাবিত করে, তা আলোচনা করা হতো।
  • কূটনৈতিক ইতিহাস: বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক, চুক্তি এবং জোটগুলো কিভাবে গঠিত হয়েছিল, তা বিশ্লেষণ করা হতো।
  • দার্শনিক চিন্তা: ইমানুয়েল কান্ট, জেরেমি বেন্থামের মতো দার্শনিকদের লেখালেখি থেকে যুদ্ধের নৈতিকতা এবং বিশ্ব শান্তির ধারণা নিয়ে আলোচনা করা হতো।

এই সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি স্বতন্ত্র একাডেমিক শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, বরং ইতিহাস এবং আইনের একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হতো।

দ্বিতীয় পর্যায়: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যয়নের পদ্ধতি এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি বড় পরিবর্তন আনে। যুদ্ধের কারণ এবং এর পরিণতিগুলো বিশ্ব নেতাদের এবং পণ্ডিতদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। এই সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি স্বতন্ত্র academic discipline হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই সময়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  • উইলসনিয়ানিজম (Wilsonianism): মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের শান্তি প্রস্তাব এবং জাতিপুঞ্জের (League of Nations) ধারণা এই সময়ের চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে। উইলসনের ১৪ দফা শান্তি প্রস্তাবের মাধ্যমে গণতন্ত্র, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর জোর দেওয়া হয়।
  • জাতিপুঞ্জ (League of Nations): প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই সংস্থাটি গঠিত হয়। যদিও এটি ব্যর্থ হয়েছিল, তবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি কাঠামো হিসেবে এর গুরুত্ব ছিল।
  • বাস্তববাদ (Realism): ই.এইচ. কার এবং হ্যান্স মরগেনথাউ-এর মতো তাত্ত্বিকগণ বাস্তববাদের ধারণা দেন। তারা বলেন, রাষ্ট্রগুলোর মূল লক্ষ্য হলো ক্ষমতা অর্জন এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মূলত ক্ষমতার রাজনীতি, যেখানে প্রতিটি রাষ্ট্র নিজ স্বার্থে কাজ করে।
  • আদর্শবাদ (Idealism): বাস্তববাদের বিপরীতে, আদর্শবাদীরা মনে করতেন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং আইনের মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তারা জাতিপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার উপর আস্থা রাখতে আগ্রহী ছিলেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি নতুন পথে যাত্রা শুরু করে, যেখানে তত্ত্ব এবং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালানো হয়।

তৃতীয় পর্যায়: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে ঠান্ডা যুদ্ধ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং এর পরবর্তী ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক अध्ययन আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই সময়ে বাস্তববাদের প্রভাব আরও বৃদ্ধি পায় এবং নতুন তাত্ত্বিক বিতর্ক শুরু হয়। এই সময়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  • ঠান্ডা যুদ্ধ (Cold War): দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যে দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা চলে, তা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে। এই সময়ে বিশ্ব দুটি প্রধান শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়: একটি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব, অন্যটি সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট বিশ্ব।
  • দ্বিমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব (Bipolar World): ঠান্ডা যুদ্ধের সময় বিশ্ব রাজনীতি দুটি প্রধান পরাশক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এই দুই পরাশক্তির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা চলতে থাকে, যা বিভিন্ন আঞ্চলিক সংঘাতের জন্ম দেয়।
  • বাস্তববাদের বিস্তার: হ্যান্স মরগেনথাউ-এর Politics Among Nations (১৯৪৮) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক अध्ययनে বাস্তববাদের মূল ভিত্তি স্থাপন করে। এই তত্ত্বে জাতীয় স্বার্থ, ক্ষমতা এবং নিরাপত্তা पर গুরুত্ব দেওয়া হয়।
  • আচরণবাদ (Behavioralism): এই সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক अध्ययনে वैज्ञानिक পদ্ধতি ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়। ডেভিড Singer এবং কার্ল Deutsch-এর মতো পণ্ডিতগণ পরিমাণগত ডেটা এবং মডেলিং ব্যবহারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক समझने চেষ্টা করেন।
  • নয়া-বাস্তববাদ (Neorealism): কেনেথ ওয়াল্টজের Theory of International Politics (১৯৭৯) নয়া-বাস্তববাদের জন্ম দেয়। এই তত্ত্বে আন্তর্জাতিক কাঠামোর উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেখানে রাষ্ট্রের আচরণ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার দ্বারা প্রভাবিত হয়।

এই সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক अध्ययन আরও বিজ্ঞানভিত্তিক হয়ে ওঠে, যেখানে তত্ত্ব এবং মডেলের মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতি বোঝার চেষ্টা করা হয়।

চতুর্থ পর্যায়: ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়কাল

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক अध्ययনে নতুন ধ্যানধারণা যুক্ত হয়। বিশ্ব রাজনীতিতে ক্ষমতার বিন্যাস পরিবর্তিত হওয়ায় নতুন তাত্ত্বিক বিতর্ক শুরু হয়। এই সময়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  • বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব (Multipolar World): ঠান্ডা যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র পরাশক্তি হিসেবে বিশ্ব মঞ্চে আবির্ভূত হলেও, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলোর উত্থান বিশ্বকে বহু মেরুকেন্দ্রিক করে তুলেছে।
  • নয়া-উদারতাবাদ (Neoliberalism): রবার্ট কোহেনের After Hegemony (১৯৮৪) নয়া-উদারবাদের মূল ধারণা দেয়। এই তত্ত্বে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সংস্থা এবং আইনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
  • গঠনবাদ (Constructivism): আলেকজান্ডার Wendt-এর Social Theory of International Politics (১৯৯৯) গঠনবাদের ভিত্তি স্থাপন করে। এই তত্ত্বে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শুধু বস্তুগত শক্তির উপর নির্ভরশীল নয়, বরং ধারণা, পরিচয় এবং সামাজিক রীতিনীতিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • গণতান্ত্রিক শান্তি তত্ত্ব (Democratic Peace Theory): এই তত্ত্বে বলা হয়, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো একে অপরের সাথে কম সংঘাতে লিপ্ত হয়। মাইকেল Doyle এবং ব্রুস Russett-এর মতো পণ্ডিতগণ এই তত্ত্বের সমর্থন করেন।
  • বৈশ্বিকতাবাদ (Globalization): এই সময়ে বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতির বিশ্বব্যাপী প্রসার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।

ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক अध्ययन আরও জটিল এবং বহুমাত্রিক হয়ে ওঠে, যেখানে বিভিন্ন তত্ত্ব এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্ব রাজনীতি समझने চেষ্টা করে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল ধারণা

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যয়নের জন্য কিছু মৌলিক ধারণা বোঝা জরুরি। এই ধারণাগুলো আমাদের বিশ্ব রাজনীতি এবং রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা আলোচনা করা হলো:

সার্বভৌমত্ব (Sovereignty)

সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা। এর মানে হলো, একটি রাষ্ট্র তার নিজের ভূখণ্ডে আইন তৈরি ও প্রয়োগ করতে পারে এবং অন্য কোনো রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এই ধারণাটি ১৬৪৮ সালের ওয়েস্টফালিয়া চুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

জাতীয় স্বার্থ (National Interest)

প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের কিছু মৌলিক লক্ষ্য থাকে, যা তার জাতীয় স্বার্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই স্বার্থগুলো সাধারণত রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সাথে জড়িত। রাষ্ট্রগুলো তাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।

ক্ষমতা (Power)

ক্ষমতা হলো অন্যকে প্রভাবিত করার সামর্থ্য। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। রাষ্ট্রগুলো তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে চায়। ক্ষমতার বিভিন্ন উপাদান রয়েছে, যেমন সামরিক শক্তি, অর্থনৈতিক সামর্থ্য, জনসংখ্যা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।

নিরাপত্তা (Security)

নিরাপত্তা হলো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার নিশ্চয়তা। রাষ্ট্রগুলো তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে, মিত্র রাষ্ট্রগুলোর সাথে জোট গঠন করে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় অংশ নেয়।

কূটনীতি (Diplomacy)

কূটনীতি হলো আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া। এটি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যোগাযোগ এবং সমঝোতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কূটনীতির মাধ্যমে যুদ্ধ এড়ানো এবং শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব।

যুদ্ধ (War)

যুদ্ধ হলো দুটি বা ততোধিক রাষ্ট্রের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত। এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা বিশ্ব রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যুদ্ধের কারণ, প্রকারভেদ এবং পরিণতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক अध्ययনে আলোচনা করা হয়।

আন্তর্জাতিক আইন (International Law)

আন্তর্জাতিক আইন হলো কতগুলো নিয়ম ও রীতির সমষ্টি, যা রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে মেনে চলে। এই আইনগুলো চুক্তি, প্রথা এবং আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক আইন আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা (International Organizations)

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো হলো বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা, যা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে। জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থা। এই সংস্থাগুলো বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তত্ত্ব

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক अध्ययনে বিভিন্ন তত্ত্ব প্রচলিত আছে, যা বিশ্ব রাজনীতিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করে। নিচে কয়েকটি প্রধান তত্ত্ব আলোচনা করা হলো:

বাস্তববাদ (Realism)

বাস্তববাদ হলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সবচেয়ে প্রভাবশালী তত্ত্বগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, রাষ্ট্রগুলো হলো প্রধান অভিনেতা এবং তারা সর্বদা নিজেদের ক্ষমতা ও নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। বাস্তববাদীরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নৈরাজ্যপূর্ণ, যেখানে কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নেই। তাই প্রতিটি রাষ্ট্রকে নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হয়।

উদারতাবাদ (Liberalism)

উদারতাবাদ বাস্তববাদের একটি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি। উদারবাদীরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের উপর গুরুত্ব দেন। উদারতাবাদীরা মনে করেন, রাষ্ট্রের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি সংস্থা (NGO) এবং ব্যক্তিও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গঠনবাদ (Constructivism)

গঠনবাদ একটি সামাজিক তত্ত্ব, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সামাজিক দিকগুলোর উপর জোর দেয়। গঠনবাদীরা মনে করেন, ধারণা, পরিচয় এবং রীতিনীতি রাষ্ট্রগুলোর আচরণকে প্রভাবিত করে। তারা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শুধু বস্তুগত শক্তির উপর নির্ভরশীল নয়, বরং সামাজিক নির্মাণের ফল।

মার্কসবাদ (Marxism)

মার্কসবাদ একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক তত্ত্ব, যা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সমালোচনা করে। মার্কসবাদীরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মূলত অর্থনৈতিক স্বার্থ দ্বারা চালিত হয়। তারা বিশ্বকে ধনী ও দরিদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত দেখেন এবং বলেন, ধনী রাষ্ট্রগুলো দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোকে শোষণ করে।

উপসংহার

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যয়ন একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক ক্ষেত্র। সময়ের সাথে সাথে এই ক্ষেত্রের ধারণা এবং চর্চা পরিবর্তিত হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে এটি মূলত ইতিহাস এবং আইনের অংশ ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটি একটি স্বতন্ত্র academic discipline হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় বাস্তববাদের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি, কিন্তু ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে উদারতাবাদ, গঠনবাদ এবং অন্যান্য তত্ত্বগুলোও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল ধারণাগুলো, যেমন সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ, ক্ষমতা এবং নিরাপত্তা, বিশ্ব রাজনীতি বোঝার জন্য অপরিহার্য। বিভিন্ন তত্ত্ব, যেমন বাস্তববাদ, উদারতাবাদ, গঠনবাদ এবং মার্কসবাদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করে। এই তত্ত্বগুলো আমাদের বিশ্ব রাজনীতি समझने এবং বিশ্লেষণ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন এবং এর মূল ধারণাগুলো জানা আমাদের বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং সংস্থার ভূমিকা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক হতে পারে।

বন্ধুরা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই আলোচনাটি কেমন লাগলো, তা জানাতে ভুলবেন না। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করুন।